শিশুশ্রম বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ কেন নেওয়া হচ্ছে না
- আপডেট সময় : ০৫:০৭:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ মার্চ ২০২৪ ২০৯ বার পড়া হয়েছে
দেশে বাড়ছে শ্রমজীবী শিশু ও শিশু শ্রমিকের সংখ্যা। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিচালিত খাতভিত্তিক শিশুশ্রম জরিপ-২০২৩ ও জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ-২০২২-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে পাঁচটি ঝুঁকিপূর্ণ খাতে কাজ করছে ৩৮ হাজার শ্রমজীবী শিশু। পাঁচ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিশুরা এসব খাতে কাজ করছে। এসব শিশু ৪০ হাজার ৫২৫টি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছে। এ ছাড়াও দেশে সার্বিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত রয়েছে ১০ লাখ ৭০ হাজার শিশু। এর মধ্যে শহরে রয়েছে দুই লাখ ৫০ হাজার এবং পল্লী এলাকায় আট লাখ ২০ হাজার। তবে দেশে সার্বিকভাবে শ্রম দেওয়ার মতো ৩৫ লাখ ৪০ হাজার শিশু রয়েছে। এর মধ্যে শ্রমের বাইরে আছে ১৭ লাখ ৬০ হাজার এবং শ্রমের মধ্যে আছে ১৭ লাখ ৮০ হাজার শিশু। এসব শিশুর বর্তমান জীবন যেমন বিপজ্জনক একইভাবে ভবিষ্যৎ জীবন অনিশ্চিত ও অন্ধকারাচ্ছন্ন। কথা হচ্ছে শিশুশ্রমে কেন যুক্ত হচ্ছে শিশুরা? যে হাতে বই থাকার কথা, সেই হাতে কেন ভারী সরঞ্জাম তুলে নিচ্ছে? এত এত আইন ও পরিকল্পনার পরও কী কমেছে শিশুশ্রম? আমাদের দেশের শিশুদের শ্রমিক হওয়ার পেছনে ব্যাপকভাবে দায়ী দরিদ্রতা। পেটের দায়ে অনেক শিশুই ঝুঁকিপূর্ণ সব পেশায় নিয়োজিত হয়। অর্থাভাবে অর্থের বিনিময়ে এসব শিশু শ্রম দিতে বাধ্য হয়। বিভিন্ন কারণে এ শিশুরা তাদের প্রাপ্য পরিচর্যা থেকে বঞ্চিত হয়।
শিশুদের শ্রমিক হওয়ার পেছনে আরেকটি বড় কারণ হলো আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। অনেকে বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও অর্থাভাবে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারে না। তাই মাঝপথে থেমে যায় তাদের পড়াশোনা। এসব শিশুর বেশিরভাগ অভিভাবকই তাদের লেখাপড়ার খরচ বহন করতে ব্যর্থ হয়। ফলে তারা ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখাতে স্কুলে পাঠানোর উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। শিশুদের কাছ থেকে সস্তা শ্রমের আগমন দারিদ্র্য এবং শিশুশ্রমের ব্যবহার উভয়ই স্থায়ী করে। দেশে শিশুশ্রম যেমন বাড়ছে তার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে শিশু নির্যাতনের প্রকোপ। এসব শিশুকে সামান্যতম ভুল হলেও নির্যাতনের শিকার হতে হয়। শিশুশ্রম শিশুদের স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে, তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে এবং তাদের জীবনের সুযোগ সীমিত করে ফেলে।তা ছাড়া কলকারখানায় কাজ করা শিশুরা দূষিত পরিবেশের সংস্পর্শে আসে। ফলে কম বয়সেই ফুসফুসের নানা সমস্যা, চোখে কম দেখা, এমনকি ক্যানসারের মতো মারণরোগেরও শিকার হয়। শিশুদের দিয়ে কাজ করানো, রোজগারে বাধ্য করা শুধু অমানবিকই নয় বরং অনৈতিক ও বেআইনিও বটে। তাই শিশুশ্রম বন্ধ হওয়া দারকার। এমন পরিস্থিতিতে শিশুশ্রম বন্ধে দারিদ্র্য নিরসনে সরকারি ও বেসরকারিভাবে যৌথ উদ্যোগ নিতে হবে। দারিদ্র্য দূর করার জন্য দরিদ্র পরিবারগুলোর আয় বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। দারিদ্র্যের কুঠারাঘাত থেকে শিশুদের মুক্ত না করতে পারলে শিশুশ্রম কমবে না।
শিশুশ্রম বন্ধ করতে হলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন এনে সব শ্রেণির শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। শিশু-কিশোরদের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তিকরণ করতে হবে। শিশুশ্রম আইনে সংশোধন এনে আরও কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। শিশুশ্রম বন্ধের উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজন সচেতনতা ও আইনের সঠিক প্রয়োগ। অমানবিক শিশুশ্রম বন্ধে মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা এবং জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মকৌশলে শিশুশ্রমকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্ব দিতে হবে।
সুন্দর আগামীর জন্য সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে শিশুশ্রম বন্ধ করতে হবে। শিশুদের ভবিষ্যতের সুনাগরিক করে তুলতে তাদের শিক্ষা পুরোপুরি নিশ্চিত করতে হবে, যার জন্য বিনিয়োগ এবং সুযোগ তৈরি করে দেওয়া প্রয়োজন।